বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৪ পূর্বাহ্ন
রফিকুল হক শিকদার জাহাঙ্গীর
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৭/০৬/২০২৩ ইং সঙ্গে দেখা করেছেন।
এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর ছেলে, আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কৃত সাবেক গাজীপুর সিটি মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম।
যোগাযোগ করা হলে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়টি জাহাঙ্গীর আলম নিশ্চিত করেছেন। তবে, তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেনে নেন।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ আল মামুন মোর্শেদ বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর মা সোমবার দুপুরের পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসেছিলেন। তবে, তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন কি না বিষয়টি আমার জানা নেই।’
তবে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ও জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর মায়ের সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার মা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন। তিনিও আমার মা। সন্তান হিসেবে মায়ের কাছে গিয়েছি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে তা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, দেখবেন।’
জানা গেছে, গত ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে আবেদন করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন ও তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম। সে আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার তাদের সাক্ষাতের সময় দেন শেখ হাসিনা। বেশ কিছুদিন ধরেই জাহাঙ্গীর আলমের অনুসারীরা সুখবর পেতে যাচ্ছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছিল। সোমবারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মা ও ছেলের সাক্ষাতের মধ্যদিয়ে সে প্রচার সত্যি হতে চলেছে। এমন ইঙ্গিতই পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম এবং তার মা জায়েদা খাতুন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। তাতে জাহাঙ্গীর আলম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করেন এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। পরে তাকে প্রথমে শোকজ ও পরে আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। দল থেকে বহিষ্কারের ৭ দিন পর ২৫ নভেম্বর বিভিন্ন অভিযোগে তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও দুদক পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। দেশের বিভিন্ন জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। পরে তিনি মেয়র পদ ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। পরে জাহাঙ্গীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি ক্ষমতাসীন দল তাকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়।
কিন্তু দলে ফেরার পর গত ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে জাহাঙ্গীর আলম আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হন। সঙ্গে তাঁর মাকেও মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন। বাছাইয়ে একটি ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের ঋণের জামিনদার হওয়ার জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। আপিলেও তিনি প্রার্থিতা ফিরে পাননি। তবে তাঁর মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর মায়ের পক্ষে নির্বাচনে নেমে একের পর এক সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে দেন জাহাঙ্গীর। পরে তাকে পুনরায় আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের মা জায়েদা খাতুন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খানতে হারিয়ে মেয়র পদে বিজয়ী হন। তারপর থেকেই জাহাঙ্গীর আলম আবার দলে ফেরার চেষ্টা করে আসছিলেন।